জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামের ব্যাপক টেন্ডারবাজি আর অনিয়মের কারণে সাতক্ষীরা কার্যালয় জিম্মি হয়ে পড়েছে। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম কোন প্রকার নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করেই বিগত সরকারের আমলে খেয়াল খুশিমত নিজের পছন্দের কতিপয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন। কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে তার নিজের ও আত্মীয় স্বজনের প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঠিকাদার নির্বাচনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কারণে সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় দুই শত কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল ধন সম্পদ গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। যশোরের নিউ মার্কেট এলাকায় ৫তলা বাড়িসহ ৮/১০টি প্লট এবং কয়েক বিঘা জমি রয়েছে তার যশোর শহরে। তাছাড়া গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি ও বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নামে বেনামে সম্পত্তি।
অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিও নিয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে তার পিতার নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেন। তার পিতার গেজেট প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা ও এলাকাবাসী।
এক অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, মো. শহিদুল ইসলাম গত ২০/০৫/২০২১ তারিখ হতে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের দরপত্রে অংশগ্রহণ করিয়ে কোন প্রকার অভিজ্ঞতা সনদ ছাড়াই কাজ প্রদান করে আসছে। পরবর্তীতে জানা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো মো. শহিদুল ইসলামের নিজের বা তার আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ জনের অথবা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলায় সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্ত্বেও খুলনার কয়রা উপজেলায় উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইসতিয়াককে দরপত্র ওপেনিং ও মূল্যায়ন কমিটিগুলোতে নামমাত্র সদস্য সচিব রেখে শহিদুল ইসলাম নিজে নিজে দরপত্র মূল্যায়ন করে আসছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শহিদুল ইসলাম নিজে সকল দরপত্র ওপেনিং ও মূল্যায়ন করেন যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সিপিটিইউ নিয়মের পরিপন্থী। যে কারণে এপ্রিল ২০২২ হতে সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ নয়ছয় হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
আরও এক অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মো. শহিদুল ইসলাম নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে সাতক্ষীরা কার্যালয়ে ১৫ মে ২০২১ সালে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে টেন্ডারবাজীর মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঠিকাদারদের অবৈধভাবে কাজ দিতে তিনি ৩%-৫% টাকা নিতেন। এস্টিমেটর ইসতিয়াক আহম্মেদ বদলী হয়ে কয়রা উপজেলা, খুলনাতে যোগদান করেন ৯ জুন ২০২২ সাল। ইসতিয়াক চলে যাওয়ার ১৫ মাস পরেও তাকে টেন্ডার ওপেনিং কমিটির সদস্য সচিব করে তার স্বাক্ষর জাল করে শহিদুল ইসলাম নিজে কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ১৮টি টেন্ডার ওপেনিং করেছেন। ইসতিয়াক আহমেদ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
স্থানীয় ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, শহিদুল ইসলাম PPA আইন ২০০৬ ও বিধি ২০০৮ এর তোয়াক্কা না করে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো অভিযোগ পত্রে বিভিন্ন টেন্ডারের অনিয়ম তুলে ধরেছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে -সমগ্রদেশ প্রকল্পের টেন্ডার আইডি নং-৮৫৬৮৪০,৮৫৬৮৫৪,৮৫৬৮৫৯,৮৫৬৮৬১,৮৫৬৮৬২,৮৫৬৮৬৩,৮৫৬৮৬৬,৮৫৬৮৬৮,৮৫৬৮৬৯,৮৫৬৮৭০,৮৫৬৮৭১,৮৫৬৮৭৩; Pedp-4 প্রকল্পের টেন্ডার আইডি নং-৮৪৬৭০১,৮৪৬৭০২,৮৪৬৭০৪,৮৪৬৭০৬,৮৪৬৭০৭; উপকুলীয় প্রকল্পের টেন্ডার আইডি নং-৮৫৫৪২২,৮৫৫৪২৪,৮৫৫৪২৭,৮৫৫৪২৯; GPS ও NNGPS প্রকল্পের আওতায় টেন্ডার আইডি নং-৬৬৮৭৮৮ ও ৬৬৮৭৮৯।
অভিযোগ রয়েছে, ২টি প্যাকেজে ৫০টি করে TSP এর দরপত্র আহবান করা হয়, এবং ২টিতে মেসার্স রব এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ধারিত হয়। ১টি কাজ রব এন্টারপ্রাইজ কে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কোন অভিজ্ঞতা সনদ ছাড়াই দেওয়া হয়, যার আইডি নং-৬৬৮৭৮৯।
সমগ্রদেশ প্রকল্পের আওতায় তালা উপজেলায় ৮৩টি করে ২টি প্যাকেজে মোট ১৬৬টি সাবমার্সিবল নলকুপের কাজ মেসার্স রব এন্টারপ্রাইজকে কোন প্রকার অভিজ্ঞতা সনদ ছাড়াই কাজ দেওয়া হয়। যার টেন্ডার আইডি নং- ৭২১২৪৩ ও ৭২১২৪৪। মালামাল সাপ্লাইয়ে বি ক্যাটাগরি লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামুলক কিন্তু সে বিষয় তোকাক্কা না করে মেসার্স সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ কে ২টি প্যাকেজে মালামাল সাপ্লাইয়ের কাজ প্রদান করে হয়, যার আইডি নং-৯২৭৭৪৩ ও ৯২৭৭৪৪ ।
সমগ্রদেশ প্রকল্পের আওতায় ১৩০টি RWH এর দরপত্র সিডিউল বিক্রির শেষ সময়ের পূর্বে টেন্ডার সিকিউরিটি সাবমিশনের সময় নির্ধারন করে দরপত্র আহবান করা হয়, যাতে তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্য কেউ অংশগ্রহণ না করতে পারে (আইডি নং-৭২৩৯১০)। GCA নামে একটি প্রকল্পের কাজ কোন অভিজ্ঞতা সনদ ছাড়াই মেসার্স জাহাঙ্গীর ট্রেডার্সকে দেওয়া হয়, যার আইডি নং-৬৩৩৪৪১।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্যে চেষ্টা করেও তার টেলিফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :