ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সিএজির নিরীক্ষা: রেমিট্যান্স প্রণোদনায় ১২ ব্যাংকের জালিয়াতি

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৪

সিএজির নিরীক্ষা: রেমিট্যান্স প্রণোদনায় ১২ ব্যাংকের জালিয়াতি

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার নগদ অর্থ বিতরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংকসহ মোট ১২ ব্যাংকে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দপ্তর। রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বিতরণ নিয়ে সংস্থাটির কমপ্লায়েন্স অডিট প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা-সংক্রান্ত ৬ হাজার ১১৯টি লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাষ্ট্রের ৬৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৫৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বিতরণ নিয়ে ২০১৯-২০ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব নিরীক্ষা চালায় সিএজি দপ্তর। নিরীক্ষায় অনিয়ম ধরা পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক হলো সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী। আর বেসরকারিগুলো হলো পূবালী, ডাচ্-বাংলা, ব্র্যাক, এনসিসি, সাউথইস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট এবং ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ১১৯টি লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম করেছে। আর অনিয়মের ৬৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৫৮ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে অডিট রিপোর্টে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবাসীদের কষ্টে অর্জিত আয়ের বিপরীতে প্রণোদনা অর্থ পুরোটা না পেলে আগ্রহ হারাবেন। সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে প্রণোদনা বন্ধ করলে সমস্যা হবে না। তবে কোনোভাবে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে হয়রানি কিংবা কড়াকড়ির শর্ত থাকা উচিত নয়।

সিএজির অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের দিলকুশার ওয়েজ আর্নার্স শাখার ভাউচার যাচাই করে দেখা গেছে, সেখানে ট্রেড ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস ও ফরেন ওয়েজ আর্নার্স শাখার মাধ্যমে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা, রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখা, ব্যাংক এশিয়ার কারওয়ান বাজার শাখা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান শাখা, এনসিসি ব্যাংকের সিলেটের চৌহট্টি শাখা রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা অর্থ পরিশোধ না করেই বানোয়াটভাবে অতিরিক্ত খরচ পরিশোধ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ক্ষতি প্রায় ৪৯ কোটি ৭ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়মের বড় একটা অংশ সরকারের কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এতে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন পরিদর্শকেরা। পরে ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার অনুসরণ করা হয়। সম্প্রতি তা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের ব্যাংক কমপ্লায়েন্স মেনে রেমিট্যান্স লেনদেন করে। এ নিয়ে অডিট হয়। সুতরাং অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে রেমিট্যান্সের বিপরীতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ পুরোপুরি বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ অর্থ ছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। তার মধ্যে নগদ প্রণোদনা সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অবণ্টিত থাকে ৪১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা ৮৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এসবকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে পর্যায়ক্রমে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক স্বেচ্ছায় প্রণোদনা দিয়েছে। সেখানে অনিয়ম হলে প্রবাসীরা বঞ্চিত হবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে নজরদারি করবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!