ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষার্থীকে হেনস্তা, তিতুমীর কর্তৃপক্ষের ডাকেও সাড়া দেননি অভিযুক্ত শিক্ষক

বাঙলা কলেজ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৫

শিক্ষার্থীকে হেনস্তা, তিতুমীর কর্তৃপক্ষের ডাকেও সাড়া দেননি অভিযুক্ত শিক্ষক

তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন

তিতুমীর কলেজের পরীক্ষার কেন্দ্রে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক আবদুল কাদের বাঙলা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ‘হেনস্তা’ করেছেন— এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষক ‘দায় স্বীকার’ করলেও, তাদের ডাকে সশরীরে হাজির হননি। তবে, তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির (বাকসাস) একটি প্রতিনিধিদল কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তিতুমীর কলেজে বৈঠক করেন। সেখানে এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিদায়ী বছরের ২৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা দিতে গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক ‘শিক্ষার্থীর পরিবার তুলে এবং তার বাবার নাম ধরে’ অকথ্য ভাষায় কথা বলেন।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমি বাঙলা কলেজের ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ২০২২-২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিতুমীর কলেজের ১৩০২ নম্বর রুমে আমার সিট ছিল। পরীক্ষার চলাকালে যখন স্যার খাতায় সিগনেচার করতে আসেন, তখন আমার খাতায় বিষয় কোডের আগে MGT লিখিনি। তাই স্যার ধমক দেন। পরে আমি জানতে চাইলাম, স্যার এর আগেও তো এভাবেই লিখেছি; তাতে আমার কোনো সমস্যা হবে?

‘‘এই প্রশ্ন করছি বলে তিনি আমার সঙ্গে রাগ দেখান। এরপর খাতা আর অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে গিয়ে এক্সপেল পেপার আনেন। আমি অনেক অনুরোধ করছি, তবু খাতা ফেরত দেননি। যখন হলের সবাই মিলে আমার হয়ে অনুরোধ করেছে, তখন আরো ৩০ মিনিট পর খাতা দেন।

‘‘এরপর যখন খাতা জমা দেব, তখন দেখি আমার খাতা সাইন করেননি। পরে সাইন করার জন্য অনুরোধ করলে, তিনি বাবা মা তুলে অনেক গালিগালাজ করেন। জিজ্ঞেস করছে, আমার বাসা কোথায়, বাবা কী করেন?

‘‘আমি বললাম আমার বাসা গ্রামে আর বাবা কৃষি কাজ করেন। এই কথা বলার পর সেই শিক্ষক বলে আমার বংশ তুলে কথা বলেন। বলেন, তার বাসার সামনে দিয়ে গেলেও নাকি মানুষ জুতা হাতে নিয়ে যায়। তার বাবা ১৯৪৭ সালে এমএ পাশ করেন। আমরা তাদের বংশের ধারেকাছেও নেই।’’

অভিযোগটি বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ কামরুল হাসানের কাছে পৌঁছালে তিনি তাৎক্ষণিক তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ শিপ্রা রাণী মণ্ডলকে অবগত করেন।

অধ্যক্ষ কামরুল হাসান বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি জানার সাথে সাথেই ওই কলেজের অধ্যক্ষকে অবগত করেছি। আমি চাই, বিষয়টি কোন ঝামেলা ছাড়াই শেষ হোক। যেহেতু আমার শিক্ষার্থীরা তিতুমীর কলেজে এবং তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আমার কলেজে পরীক্ষা দেয়, তাই কোনো ধরনের রেষারেষি বা প্রতিহিংসা যেন না হয়, সেভাবেই বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছি। আমি ওই কলেজের অধ্যক্ষকে অবগত করেছি। তিনি আমাকে একটি প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।’’

তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ শিপ্রা রাণী মণ্ডল বলেন, “বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ আমাকে যখন এই বিষয়ে অবগত করেন, আমি তখন থেকেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমি বাঙলা কলেজ থেকে একটি প্রতিনিধিদল এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেছি। আশা করি তারা আসার পর সমাধান হয়ে যাবে।”

এরপর বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ বাকসাস-এর সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল তিতুমীর কলেজে পাঠায়। প্রতিনিধিদল সেখানে অধ্যক্ষ শিপ্রা রাণী মণ্ডল, উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন অধ্যক্ষ শিপ্রা রাণী মণ্ডল বলেন, “আমি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী এবং আমার কলেজের শিক্ষার্থী সবাইকে সমান চোখে দেখি। তারা সবাই আমার শিক্ষার্থী ও সন্তান। আমি এই কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে এই বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কৃষক এদেশের অমূল্য সম্পদ। তাদের কোনোভাবেই অন্য চোখে দেখা যাবে না। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমরা কলেজ প্রশাসন মিলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমার কলেজে এ ধরনের ঘটনার জন্য আমি নিজেই লজ্জিত। আমি চাই সব সময়ই এই দুই কলেজের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক।”

উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, “আমার বাবাও একজন কৃষক। আমরা সব সময়ই সকল পেশার মানুষকে সম্মান করি। বিষয়টির জন্য আমরা লজ্জিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা আর হবে না। আমরা কলেজ প্রশাসন মিলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।”

তবে অভিযুক্ত শিক্ষককে বারবার আসার জন্য বলা হলেও তিনি আসেননি। এ ছাড়া প্রতিনিধিদল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে সাক্ষাৎ করেননি।

বার্তাজগৎ২৪/শিহাব আল নাছিম/ক্যাম্পাস

Link copied!