ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লাখ টাকা পুরস্কারের তদন্তে ‘তুঘলকি’

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪

লাখ টাকা পুরস্কারের তদন্তে ‘তুঘলকি’

মাদক মামলায় ‘ত্রুটিহীন’ তদন্তের স্বীকৃতি হিসেবে লাখ টাকা পুরস্কার পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিদর্শক ফজলুল হক খান। কিন্তু আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্তে মিলেছে এন্তার ত্রুটি। শুধু তাই নয়, তদন্তের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা ফজলুল হকের তুঘলকিও স্পষ্ট। তাঁর প্রতিবেদনে থাকা তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতাই পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম ইয়াবার কাঁচামাল অ্যামফিটামিন পাউডার জব্দ হয়। বিমানে ওঠার আগেই রপ্তানি কার্গো ভিলেজ থেকে কয়েকটি সংস্থার সহায়তায় এ সময় ছয়জনকে আটক করে ডিএনসি। পরে তাদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন সংস্থার পরিদর্শক হোসেন মিঞা। মামলাটি তদন্ত করেন পরিদর্শক ফজলুল হক খান। ২০২১ সালের মার্চে তিনি এজাহারভুক্ত ছয়জনকে বাদ দিয়ে নতুন ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণে ত্রুটিপূর্ণ মনে হওয়ায় পরবর্তী সময়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন বিচারক। তদন্ত করে পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন, যাতে আগের তদন্ত কর্মকর্তার বেশ কিছু ত্রুটি উঠে এসেছে। অথচ খুব ভালো তদন্ত করেছেন বিবেচনায় ফজলুল হককে ২০২১ সালে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেন ডিএনসির তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার।

ফজলুল হকের তদন্তে অভিযুক্তরা হলেন– মোহাম্মদপুর বছিলার আইডিএস ক্রস ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার জুনায়েদ ইবনে সিদ্দিকী, মিটফোর্ডের কেমিক্যাল ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বান্টি, জুনায়েদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের লোডার রুবেল হোসেন দেওয়ান, জুনায়েদের গাড়িচালক বাপ্পি হাসান, ভগ্নিপতি বাবুল মজুমদার, ব্যবসায়িক অংশীদার সতীশ কুমার সিলভারাজ, ফুফাতো ভাই দ্বীন ইসলাম, জুনায়েদের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জোহুরা ও কুরিয়ার সার্ভিস ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের কর্মচারী রেজাউল হক বাবুল।

পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে, ৯ নম্বর আসামি জুনায়েদের স্ত্রী ফাতেমা চাকরিজীবী এবং কুমিল্লার তিতাসে তাঁর ‘কনক অ্যাগ্রো ফিশারিজ’ নামে মাছের খামার রয়েছে। অথচ আগের তদন্ত কর্মকর্তা তাঁকে গৃহিণী উল্লেখ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ফাতেমার ব্যাংক হিসাবে মাদক কারবারের অর্থ লেনদেনের সত্যতা পাওয়ার কথা চার্জশিটে ফজলুল হক উল্লেখ করলেও, নতুন তদন্তে বিয়ের আগে থেকেই ফাতেমার হিসাবে মোটা অঙ্কের অর্থ পাঠিয়েছেন বাইরাইন থেকে তাঁর বাবা।

পিবিআইর চার্জশিটে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তা ফাতেমার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের কথা বলেছেন। কিন্তু জুনায়েদের সঙ্গে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর বিয়ের আগে দুই বছরে ফাতেমা প্রায় ২০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা লেনদেন করেছেন। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁর হিসাবে ৭২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। এ অর্থ ফাতেমাকে পাঠিয়েছেন ৩০ বছর প্রবাস জীবনে থাকা তাঁর বাবা। ডিএনসি ফাতেমার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বিক্রির টাকা ব্যাংকে লেনদেনের অভিযোগ করলেও পিবিআই সত্যতা পায়নি।

তদন্ত কর্মকর্তা ৮ নম্বর আসামি দ্বীন ইসলামকে জুনায়েদের ব্যবসায়িক অংশীদার উল্লেখ করলেও পিবিআই এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পায়নি। এ ছাড়া ১০ নম্বর আসামি রেজাউল হক বাবুলকে অভিযুক্ত করা হলেও, পিবিআই এ-সংক্রান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পায়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে।

জানতে চাইলে পিবিআইর পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ জনের মধ্যে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমার তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আইনগত কারণে অভিযোগপত্রে সবার নামই রাখা হয়েছে।’

ফজলুল হক বর্তমানে ডিএনসির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের খিলগাঁও সার্কেলে কর্মরত। পিবিআইর চার্জশিটে কী আছে জানা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ১০ জনের 
বিরুদ্ধে যে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি, তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছি। নির্মোহ তদন্তের জন্যই পুরস্কৃত করা হয়েছে।’

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ বলেন, তদন্তের ত্রুটিবিচ্যুতি হয়তো তৎকালীন কর্মকর্তার নজরে আসেনি। তবে ভবিষ্যতে আরও সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!