ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে ‘অভিযোগের পাহাড়’

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে ‘অভিযোগের পাহাড়’

সম্মেলনের প্রায় দেড় বছর পরে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দুই মহানগরে চলছে তুলকালাম। পদবঞ্চিতরা এরই মধ্যে প্রস্তাবিত কমিটির নেতাদের নামে নানান অভিযোগ আনতে শুরু করেছেন। টাকা নিয়ে কমিটি প্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও।

তবে মহানগরের নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, বাদ পড়ার শোধ তুলতে এবং সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বায়বীয় অভিযোগ করছেন পদবঞ্চিতরা। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে সম্মেলনে কমিটি হলে এমন অভিযোগ উঠত না।

জানা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হয়। এরপর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। গত ৪ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ২৬ থানা ও ৬৪ ওয়ার্ডের এবং ১৬ জুন মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ২৪ থানা ও ৭৫ ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে জমা দেন। ঢাকা-৯ আসনভুক্ত খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানার জন্য আলাদা কমিটি জমা দেন মন্নাফী ও হুমায়ুন। এসব কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়।

প্রস্তাবিত কমিটিতে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ফুটপাত-জমি দখলকারী, ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত এবং হত্যা মামলার আসামিদের নাম এসেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন থানা কমিটির নেতারা। সেই সঙ্গে এসব কমিটি প্রস্তাবের পেছনে বিপুল অর্থের লেনদেনও হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। প্রস্তাবিত কমিটির নাম জমা দেওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর চিঠি দিয়েছেন বাদ পড়ারা। এতে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এসব চিঠির অন্তত ২০টি আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। সেসব চিঠিতে মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়।

শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ অভিযোগ করেছেন, এ থানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্থের বিনিময়ে শাহবাগ থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। এটা দিবালোকের মতো সত্য।

রমনা থানার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাবিত গোলাম মোস্তফা শিমুলের নামে স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রে পাঠানো লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ২০১০ সালে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হত্যা মামলার আসামি ও ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত শিমুলের নামে ছয় থেকে সাতটি মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে শিমুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমেদ অভিযোগ করেছেন, প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি ইয়ার উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হত্যা মামলার আসামি। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগও আছে। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে তাঁকে সভাপতি পদে রেখেছেন।

৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির বিদায়ী সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসু অভিযোগ করেছেন, তাঁর থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির তাঁকে পদে রাখেননি। তিনি টাকা ফেরত চেয়েছেন।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের পদ-বাণিজ্য নিয়ে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে ফোন করে দক্ষিণখান থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড নেতা আকবর আলী পদ পেতে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়। আর টাকা নেওয়ার কথা ফোনে না বলে সরাসরি বলার পরামর্শ দেন বজলুর রহমান। অডিওটি এডিট করা বলে আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন শেখ বজলুর রহমান।  

অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও আছে, আবার অভিযোগটার বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ আছে। আমার পেছনে হাবিব হাসান (উত্তরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) সাহেব কলকাঠি নেড়েছেন।’

এদিকে উত্তরের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা-১৮ আসনের থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী নেতারা লিখিত অভিযোগে বলেছেন, রাজপথের নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অযোগ্য, বিতর্কিত ও বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের পদে রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেখানে উত্তরখান, তুরাগ, বিমানবন্দর, উত্তরা উত্তর-পশ্চিম থানার ১১ নেতা স্বাক্ষর করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওপর থেকে কোনো কমিটি প্রস্তুত করা হলে সেটা নিয়ে বিভিন্ন রকমের কথাবার্তা, কানাঘুষা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতিতে গণতন্ত্রের চর্চাটা সব পর্যায়ে হওয়াটা জরুরি। এ চর্চার সংস্কৃতি যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়ে উঠছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের কানাঘুষা চলতেই থাকবে।

মহানগরের নেতারা দাবি করছেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও ঢালাওভাবে অভিযোগ করে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন বাদ পড়ারা। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘মহানগরের কমিটি ঘোষণা করলে প্রতিবারই কথা ওঠে। আমরা যদি ফেরেশতা দিয়ে কমিটি গঠন করি, তারপরেও পাঁচ-সাত দিন পরে দেখবেন ওর মধ্যে পাঁচ-সাতটা শয়তান পাবেন। এ রকমই হয়। তবে আমাদেরও ভুলত্রুটি হতে পারে।’

কমিটি দেওয়ার পরে অভিযোগ সামনে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘কত লোক আসছে আমি টাকা না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি। যারা কমিটিতে আসতে পারেনি, তারাই নানান অভিযোগ দিচ্ছে।’

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!