ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

নিষিদ্ধ জামায়াত, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কী হবে?

বার্তাজগৎ২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৪

নিষিদ্ধ জামায়াত, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কী হবে?

১৯৭৯ সালে সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই দলীয় অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন জামায়াতের অন্যতম নেতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মীর কাসেম আলী। ১৯৮০ সালে ইবনে সিনা ট্রাস্ট গঠনের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পরে জামায়াতের অন্য নেতাদের মাধ্যমে শিক্ষা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, জ্বালানি পরিশোধন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈরি পোশাক, রিয়েল এস্টেট, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন সংগঠনটির অনুসারীরা। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দলকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করে সংগঠনটি। গত বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এখন প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় আদর্শে গড়ে তোলা জামায়াত-সংশ্লিষ্টদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হবে?

স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার ও ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের কয়েকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দি ইবনে সিনা এপিআই ইন্ডাস্ট্রি, দি ইবনে সিনা ন্যাচারাল মেডিসিন, দি ইবনে সিনা পলিমার ইন্ডাস্ট্রি ও ইবনে সিনা কনজ্যুমার প্রডাক্টস লিমিটেড।

ইবনে সিনা ট্রাস্টের বাইরে দলীয় অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইয়ুথ গ্রুপ। এ গ্রুপের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, গ্যাস কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন কেন্দ্র ও এলপিজি কারখানা রয়েছে। শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে গ্রুপের একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এই গ্রুপটির বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার আয় রয়েছে।

এর বাইরে জামায়াতের কর্মীদের অন্যতম বড় ব্যবসা হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মানারাত নামের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম উল্লেখযোগ্য। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তি কোচিংগুলো সংগঠনটির কর্মী সংগ্রহে বড় ভূমিকা রেখেছে। জানা গেছে, জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা হচ্ছে।

ইবনে সিনা ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয় ১৯৮০ সালে। জামায়াতের অন্যতম নেতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মীর কাসেম আলী এই ট্রাস্টের প্রধান উদ্যোক্তা। নিজ দলের কর্মীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর্থিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোই এই ট্রাস্ট গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য।

ট্রাস্ট গড়ে তোলার পর ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নামে শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক গড়ে তোলে ইবনে সিনা ট্রাস্ট। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে নেওয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হওয়ার পর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি মালিকানা হারান ইবনে সিনা ট্রাস্টসহ জামায়াতের ব্যবসায়ীরা। তবে মালিকানায় পরিবর্তন এলেও প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ কর্মীই জামায়াতে ইসলামীর।

ইসলামী ব্যাংক গড়ে তোলার বছরই প্রতিষ্ঠিত হয় ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, যেটি পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এ কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ রয়েছে ইবনে সিনা ট্রাস্টের হাতে। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসে চার হাজার কর্মী রয়েছেন। যেখানে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি টার্নওভার থাকা কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার রয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কর্মী। অভিযোগ রয়েছে, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই শিবিরকর্মী, যাদের মূলত দলীয় কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোহারা দেওয়া হয়।

সব ধরনের টেস্টে ৩০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে দেশ জুড়ে ব্যবসা জমিয়ে বসেছে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টার। বর্তমানে ইবনে সিনা ট্রাস্টের অধীনে ইবনে সিনা নামে একটি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও দুটি সাধারণ হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউটও। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার এসব প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার জামায়াত-শিবিরকর্মীদের যেমন কর্মসংস্থান হচ্ছে, তেমনি বছরে হাজার কোটি টাকাও আয় হচ্ছে। ইবনে সিনা ট্রাস্টের আয় থেকে বছরব্যাপী জামায়াতের কর্মীদের মাসোহারা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির নামে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দেওয়া হয়। এ ছাড়া জামায়াত আদর্শে গড়া স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোকেও নিয়মিত অনুদান দেওয়া হয় এই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে। ট্রাস্টের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় কর্মীদের আলাদা ছাড়ে চিকিৎসা সুবিধা দেয়।

আজ বিক্ষোভ, কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগআজ বিক্ষোভ, কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ
জামায়াত-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিডি ফুডস কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় ২০০৫ সালে মামলা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যে টাইলস ও সবজি রপ্তানির আড়ালে ২১ কেজি ও ৫৪ কেজি হিরোইন পাচারের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় দুটি মামলাটি হয়েছিল। তবে প্রায় দুই দশক আগে মামলা হলেও সাক্ষী হাজিরের ব্যর্থতার কারণে এর বিচারকার্য আজও শেষ হয়নি।

এর আগে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্থিক, সেবামূলক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে পুলিশও জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১২৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে ৩৭৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। অভিযোগ আছে, বর্তমানে জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন। এখন দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

বার্তাজগৎ২৪

Link copied!