প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড সফর করবেন। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হতে যাচ্ছে। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি সমঝোতাপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংককে আসন্ন রাষ্ট্রীয় সফরের পাশাপাশি ইউএনএসকাপ (এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক জাতিসংঘের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কমিশন) কমিশনের ৮০তম সভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর উপলক্ষে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেস ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সরকারি সফর এবং ইউএনএসকাপের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। ২৬ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করবেন। এরপর থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী যোগদান করবেন। আলোচ্য সফরে প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে রাজা ভাজিরালংর্কন ফ্রা ভাজিরাক্লাওচাউহুয়া এবং রানী সুধিদা বজ্রসুধাবিমলালক্ষণের সাক্ষাৎ লাভ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির জন্য ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’র পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষত বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল এবং সমুদ্র সংযোগ, উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট পর্যটন প্রচার, পর্যটন অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যৌথ কার্যক্রম ও দক্ষতা বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করতে পারবে। পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতার ফলে উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি করা হলে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণে সরকারি কর্মকর্তারা সময়মতো যোগদান করতে পারবেন।
আসন্ন সফরের তাৎপর্য সম্পর্কে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকাস্থ থাই দূতাবাস বছরব্যাপী নানাবিধ আয়োজনের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে। গত দুই দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুমুখী সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কার্যকর উন্নয়ন ঘটেছে। তদুপরি, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। সার্বিক দিক বিবেচনায়, প্রধানমন্ত্রীর ওই সফর দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বিধায় এটি উভয় দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রেক্ষিতে, দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে দুই দেশের শীর্ষ প্রধানের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি সমঝোতাপত্র সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তি হতে পারে ‘অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত’ ইস্যুতে। সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে, জ্বালানি সহযোগিতা, পর্যটন সহযোগিতা এবং শুল্ক-সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক। এ ছাড়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র সই হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ মর্যাদাপ্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়ে আরও জোরালোভাবে অনুরোধ করা হবে। এ ছাড়া মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে থাইল্যান্ডসহ আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অধিকতর সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়াও ইউএনএসকাপের ৮০তম অধিবেশন ২২ থেকে ২৬ এপ্রিল ব্যাংককের জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউএনএসকাপের বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব-ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই অধিবেশনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানগণ ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত রয়েছেন। অধিবেশনে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কীভাবে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ২৫ এপ্রিল ইউএনএসকাপ অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘ এজেন্ডা ২০৩০ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বক্তব্য দেবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইউএনএসকাপের নির্বাহী সচিব সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা ইউএনএসকাপের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগদান করবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ইউএনএসকাপ বিভিন্ন বিষয়ে নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিবিআইএন সংযোগ প্রকল্পে এসকাপ প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ক্রস বর্ডার পপারলেস বাণিজ্য ব্যবস্থা গঠন করতে এসকাপ প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে। এ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তীর্ণ, অভ্যন্তরীণ শুল্ক খাতসহ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এসকাপ বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :