গাজার শহর রাফায় ইসরায়েল বড় ধরনের স্থল অভিযান চালালে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে সতর্ক করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যদি তারা রাফায় হামলা চালায়, তাহলে সেখানে এখন পর্যন্ত যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এমন অস্ত্র আর আমরা সরবরাহ করবো না।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরব বিরোধিতা সত্ত্বেও, ইসরায়েল রাফাহতে একটি বড় আকারের আগ্রাসন চালাতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। দক্ষিণ গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকা হামাসের শেষ প্রধান শক্ত ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, গাজার অন্যান্য শহর থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কারনে পূর্ণ এই শহরে এখন অভিযান চালালে ব্যাপক বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটবে।
‘আমরা অস্ত্র ও আর্টিলারি শেল সরবরাহ করবো না’ বুধবার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বলেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাফাহর বর্তমান পরিস্থিতিকে স্থল অভিযান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেনি। তারা জনবহুল এলাকাগুলোতে যায়নি। সীমান্তে তারা যা করেছে সেটা ঠিক সীমান্তে। কিন্তু আমি (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু) এবং যুদ্ধ মন্ত্রীসভাকে এটা পরিস্কার করেছি যে তারা যদি জনবহুল এলকায় যায় তবে আমাদের সমর্থন পাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ইসরায়েল গাজার বেসামরিক মানুষ হত্যায় ব্যবহার করেছে বলে স্বীকার করেছেনবাইডেন। ইসরায়েল ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে কি না জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এখনও নয়’।
রাফাহতে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের বিষয়ে ইউএস প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত। এবং প্রথমবারের মতো তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান বন্ধ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইসরায়েলে হাজার হাজার বোমার চালান আটকে রেখেছে এবং ভবিষ্যতে সরবরাহের বিষয়টি তারা পর্যালোচনায় রাখছে।
বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সিনেটের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় পশ্চিমা সামরিক অস্ত্রাগারের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক কিছু অস্ত্র ও বোমার চালান সরবরাহ বিলম্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র সরবরাহ আটকে রেখেছে তা ভবিষ্যতে সরবরাহের জন্য। ফলে এই পদক্ষেপের কারনে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু ইসরায়েল যে হারে এখন বোমা বর্ষন করছে তাতে নিকট ভবিষ্যতের হামলাগুলোতেই এর প্রভাব পড়বে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দুই দেশ এসব মতবিরোধ ‘বন্ধ দরজার আড়ালে’ সমাধান করবে।
গাজায় অনবরত বেসামরিক লোকের মৃত্যু ও মানবিক পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হওয়ায় ইসরায়েলি অভিযানে লাগাম দিতে ডেমোক্র্যাট ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের একাংশের অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, দক্ষিণ রাফাহতে এই সপ্তাহে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক প্রবেশ করে ইসরায়েলের সাথে সীমান্তের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে দক্ষিনের দুই প্রবেশপথ দিয়ে নতুন কোন ত্রান সহায়তা সরবরাহ করা হয় নি।
ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ‘অভূতপূর্ব’ নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, মিত্রদের মধ্যে যেসব বিরোধ ছিলো সেগুলো “ বন্ধ দরজার আড়ালে একটি বাস্তব উপায়ে” সমাধান করা হয়েছিল।
তবে, বুধবার বিবিসির নিউজআওয়ারকে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন বোমার সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করেছে।
ইসরায়েলি পার্লামেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্য বোয়াজ বিসমুথ বলেছেন, “আমেরিকার নির্বাচনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে আমি একেবারেই একমত নই”।
গত অক্টোবরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাফাহ ত্রান সহায়তা প্রবেশ এবং পালিয়ে যেতে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার সকালে ক্রসিংটি বন্ধ ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে, তারা নিকটবর্তী কেরেম শালোম ক্রসিংটি আবার খুলছে। যেটি হামাসের রকেট হামলার কারনে চারদিন ধরে বন্ধ ছিলো।
সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী কয়েক হাজার বেসামরিক লোককে সরিয়ে রাফাহ শহরের পূর্ব দিক খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। এটিকে তারা হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য একটি ‘সীমিত’ অভিযান বলেছিল।
এদিকে, ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির পাশাপাশি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর একটি প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কায়রোতে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আবারো আলোচনা শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সাথে আলোচনা “ চলমান ছিলো এবং আমাদের উদ্বেগের পুরোপুরি সমাধান হয় নি”। এবং যুক্তরাষ্ট্র এপ্রিল থেকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র হস্তান্তর পর্যালোচনা করছে।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল হামাসকে নির্মূলের অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় বারশ জন নিহত হয় এবং ২৫২ জনকে জিম্মি করা হয়।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হিসাবে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৮০ জনের ও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
নভেম্বরে হওয়া এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাস একশ পাঁচজন জিম্মি এবং ইসরায়েল কারাগারে থাকা ২৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। তবে ইসরায়েল বলেছে ১২৮ জন জিম্মির হিসাব নেই। যাদের মধ্যে ৩৬ জনকে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :